একটা সময় ছিল যখন পণ্য উৎপাদন কঠিন কাজ ছিলো, তখন কোন পণ্য বিক্রয় এর জন্য কোন ধরনের আলাদা কোন গুণ অর্জনের প্রয়োজন ছিল না, কারন তখন উৎপাদন কম ছিল চাহিদার তুলনায়, ব্যবসায়ীদের শুধুমাত্র পণ্য সংগ্রহ করে একটি নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারন করে বিক্রি শুরু করলেই হতো, এটি এতটাই সহজ ছিল । কিন্তু এখন, যখন উৎপাদন এর বিপ্লব চলছে এই সময় শুধুমাত্র পণ্য নিয়ে বসলেই চলবে না, বা উৎপাদন করলেই যথেষ্ট নয়, যদিও পণ্যের গুনগতমান ভালো থাকে তবুও ট্রেডারদের/ব্যবসায়ীদের বেশকিছু গুণাবলী প্রয়োজন যা অন্যদের থেকে তাকে আলাদা করবে। বিয়িং এ ট্রেডার ব্লগ এর দৃষ্টি অনুযায়ী কি সে গুণাবলীগুলোঃ-
০১। মানসিকতাঃ- সেবার মানসিকতা
০২। সর্বদা চমৎকার ব্যবহার
০৩। কমিটমেন্ট রক্ষা করা
০৪। প্রতিদিন নিজের সর্বোচ্চটুকু দেয়া
০৫। ব্যবসায়ীক লাভ, বা লোকসান দুটিকেই মেনে নেয়া
০৬। প্রতিনিয়ত ব্যবসায়ীক উন্নয়ন সাধন এর প্রচেষ্টা করা।
০৭। ক্রেতাদের চমকে দেয়া
০৮। নিজের কোন ভুলকে মেনে নেয়া।
০৯। আপটুডেট থাকা
১০। সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত
১১। তড়িৎ সিদ্ধান্ত
একজন ব্যবসায়ীর জন্য যে গুণাবলী থাকা বা অর্জন করা প্রয়োজন
০১।মানসিকতাঃ- একজন ট্রেডার এর জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারন এর উপরই নির্ভর করে ব্যবসায়িক বাহ্যিকরুপ বা বহিঃপ্রকাশ। কোন ব্যবসায়ী যদি সঠিক মানসিকতা গড়ে তুলতে না পারেন তাহলে তার ব্যবসায় তা প্রকাশ পেয়ে যাবে, পণ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে, সংগ্রহ করা, বিতরণ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপেই এই প্রভাব পড়বে। তাই প্রথমে মানসিকতা গঠন করে নিলে বাকি কাজগুলো সহজ হয়ে যায়।
সেবার মানসিকতা নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে হবে, কোন ব্যবসায়ী যদি সেবার মানসিকতা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন তবে তার ব্যবসায়ের প্রতিটি পর্যায়ে একটি পরিচ্ছনতার ছোয়া থাকবে। তিনি কোন ভাবেই তার মুনাফার কথা ভেবে পণ্যের গুনগতমান বিসর্জন দিবেননা, কাউকে ঠকিয়ে মুনাফা করার কথাই চিন্তাই করবে না , কারও সাথে কথা বলার সময় শালীনভাবে বলবে, তেমনিভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার ব্যবসায়ে চমৎকার বহিঃপ্রকাশ হবে। যা ক্রেতাগন, ভোক্তাদের আকর্ষন করবে, এই পৃথিবীর সকল ধরনের মানুষ হোক সে ভালো বা মন্দ তাদের নিজস্ব তরঙ্গ রয়েছে। যার ফলে মানুষ যতই গোপন করতে চান না কেন তার মানসিকতা উপলব্ধি করা যায়, হয়তো সময় কম বা বেশী লাগতে পারে এই যা। একজন অসৎ ব্যক্তিও সৎ ব্যক্তিকে পছন্দ করে, তাকে বিশ্বাস করে, তার উপর আস্থা রাখে, কিন্তু দুইজন অসৎ ব্যক্তিও একজন আরেকজনকে পছন্দ করতে পারে না তাকে বিশ্বাস করে, তার উপর আস্থা রাখে।
চমৎকার মানিসিকতা কি ব্যবসায়ের জন্য প্রতিবন্ধক? একটু ভাবলেই বুঝতে পারবেন মোটেও না। ব্যবসা বেশী হতে হবে, শুধুমাত্র ব্যবসায়ীক মানসিকতা নিয়ে শুরু করা ব্যবসায়ীদের তুলনায় এরা অনেক বেশী ব্যবসা করে, যা বলার অপেক্ষা রাখে না।
০২। সর্বদা চমৎকার ব্যবহারঃ- শুধু ভালো ব্যবহার না লিখে চমৎকার বলাতেই বাকিটা বুঝে যাওয়ার কথা। এমন ব্যবহার করতে হবে যাতে করে ক্রেতাগণ মনে মনে প্রশংসা করেন, এই ব্যবহারই যা তাদের আবার আসার প্রেরণা যোগায়। এতে করেই আপনার সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে, আপনার সন্তুষ্ট ক্রেতাগণই আপনার প্রশংসা করবে যার ফলে ব্যবসার উন্নতি নিয়ে ভাবনারই প্রয়োজন হবে না। এবং এই ব্যবহার বজায় রাখতে হবে, এমন অনেক ব্যবসায়ীগণ রয়েছেন যারা তারা ব্যবসায়ের শুরুর দিকে বেশ আন্তরিক থাকলেও যতই ব্যবসার প্রসার হতে থাকে তারা ভালো ব্যবহারকে আর প্রয়োজনীয় মনে করে না। এবং এক সময় তাদের ব্যবসায়ে ধস নামে এবং অনেকে সেই ব্যবসা থেকেই চিরতরে বিদায় নেন। যে সকল প্রতিষ্ঠানগুলো যুগের পর যুগ সফলতার সাথে ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছেন তারা তাদের ব্যবহার দিয়ে প্রতিনিয়ত ক্রেতাগণকে মুগ্ধই করেছেন।
০৩। প্রতিশ্রুতি রক্ষা করাঃ- প্রতিশ্রুতি দেয়ার পূর্বে ভাবতে হবে রক্ষা করতে পারব কিনা, যদি রক্ষা না করা যায় তাহলে আনুমানিক প্রতিশ্রুতি করাই যাবে না। আর একবার করেই ফেললে যে করেই হোক তা রক্ষা করতে হবে। প্রতিশ্রুতির হেরফের ব্যবসায়ীক প্রবৃদ্ধির পথে অনেক বড় অন্তরায়। তাই প্রতিশ্রুতি করা এবং রক্ষার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। পন্যের গুনগত মানের প্রতিশ্রুতি, সেবা অব্যহত রাখা, কখনো সেবা অব্যহত রাখতে না পারলে তা আগে থেকেই জানানো, কোন আগাম অফার এর ঘোষণা করলে তা দেয়া ইত্যাদি আরও কিছু বিষয় যেগুলোর প্রতিশ্রুতি করা এবং রক্ষা করা একজন ব্যবসায়ীর সফলতার অনেক বড় নিয়ামক।

০৪। সর্বদা নিজের সর্বোচ্চটুকু দেয়াঃ- প্রতিটি ব্যবসায়ীর নিজস্ব সামর্থ্যে রয়েছে তাকে তার সাধ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চটুকু দিতে হবে ব্যবসায়ীক উন্নতি সাধন এর লক্ষ্যে।কোন ট্রেডারকেই কাজ জমিয়ে রাখলে চলবে না আজকের কাজ আজকেই করে ফেলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে, অনেক ক্ষেত্রে করতেই হবে। একজন ব্যবসায়ীকে তার ব্যবসায়িক প্রসার এর লক্ষ্য অনেক পদক্ষেপ নিতে হয়, যা করতে যেয়ে অনেক সময়ই প্রয়োজন হয় অতিরিক্ত প্রয়াস এর, এই সময় অতিরিক্ত সময়, খাটুনি সবকিছুতে নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে প্রচেষ্টাই ব্যবসায়ের প্রসার ঘটায়।
০৫। ব্যবসায়ীক লাভ লোকসান দুটোকেই মেনে নেয়াঃ- ব্যবসায়ের মানে বিনিময় যেখানে মুনাফা একটি বড় উদ্দেশ্য কিন্তু একজন ব্যবসায়ীর শুধুমাত্র মুনাফার কথা চিন্তা করে ব্যবসা শুরু করলে বা প্রতিটি ট্রেড থেকেই মুনাফা করতে চাইলে তাকে ট্রেডার বলা যাবে না। কখনো সেবা করার নিয়তে ট্রেড করতে যেয়ে মুনাফা নাও হতে পারে, কিন্তু এই মেনে নেয়াও অনেক সময় বেশ বড় মুনাফার কারন হয় যা প্রতিটি সফল ব্যবসায়ীর ব্যবসায়ীক জীবনে ঘটে এবং তাদের সফলতার বেশ কিছু কারনের মধ্যেও এটি একটি। শুধুমাত্র মুনাফা অর্জনের প্রচেষ্টা একজন ব্যবসায়ীকে করে তোলে বেশ রুক্ষ সে মুনাফার কথা চিন্তা করে অনেক সময় পণ্যর গুনগত মানকেও বিসর্জন দিতে কার্পণ্য করে না। কোন ক্রেতা যিনি তুলনামূলক কম মুনাফার পণ্য নেন তার সাথে ব্যবহার এর ক্ষেত্রেও কম্প্রোমাইজ করেন যা তার ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির পথে অন্তরায় হয়ে দাড়ায়। তাই শুধুমাত্র মুনাফা এই চিন্তা পরিত্যাগ একজন ব্যবসায়ীকে ভিন্ন মাত্রা প্রদান করে।
০৬। প্রতিনিয়ত ব্যবসায়ীক উন্নতি সাধনের প্রচেষ্টা করাঃ- যুগের পরিবর্তন এর সাথে সাথে মানুষের মানসিকতা চিন্তা চেতনার ও পরিবর্তন ঘটতে থাকে। মানুষ পরিবর্তন পছন্দ করে আর পরিবর্তন সাদরে গ্রহনও করে নেয়। যে ট্রেডারগন পরিবর্তন এর সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারেন না তারা একটা সময় হারিয়ে যেতে থাকেন। তাই একজন ট্রেডারকে অবশ্যই ক্রমবর্ধমান চাহিদা অনুযায়ী যুগের পরিবর্তন এর সাথে তার ব্যবসায়ীক ধারনারও উন্নতি সাধনের প্রচেষ্টায় লিপ্ত থাকতে হবে। প্রতিটি ট্রেডারঅই কোন না কোনভাবে নিজেও ক্রেতা /ভোক্তা। তাই একজন ভোক্তা কি আশা করতে বা কোন বিষয় সংযোজন এবং বিয়োজন করলে ব্যবসায়ীক প্রবৃদ্বি আসতে পারে তা প্রতিনিয়ত ভাবতে হবে।
০৭। ক্রেতাদের চমকে দেয়াঃ- একজন ব্যবসায়ীর মাঝে মাঝে তার ক্রেতাদের অবাক করে দেয়ার মতো ইভেন্ট এর পরিকল্পনাও করতে হতে পারে। যে একজন ট্রেডারকে অন্যান্য ট্রেডারদের থেকে আলাদা করবে এবং ক্রেতাগণ তাদের মনে রাখার মত আরও কারন খুঁজে পাবে। মানুষ সারপ্রাইজ হতে পছন্দ করে তাই ব্যবসায়ীগণকে এই বিষয় এর উপর ধারনা রেখে এগিয়ে যেতে হবে, যা তার ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে।

০৮। নিজের ভুল মেনে নেয়াঃ- যখন অনেক ক্রেতা/ভোক্তার সাথে ট্রেড হয় তখন এমন হতেই পারে যা আপনার কোন ব্যবহার কারও একজনের ভালো নাও লাগতে পারে তখন হয়তো বা তার কোন কথায় আপনার রাগ হতে পারে, কিন্তু একজন ট্রেডার হিসেবে আপনাকে সেই রাগ হজম করে, নিজের ভূল স্বীকার করে নিতে হবে। আপনি একটু খেয়াল করলেই বুঝবেন আপনিও যখন ক্রেতা হয়ে কোথাও কোন কিছু কিনতে যান, আপনারও এমন মনে হতেই পারে যে তাদের কোন বিষয় আপনাকে বিরক্ত করছে যাতে করে আপনি রেগে গেলেন, কিন্তু তারা বিষয়টিতে রেগে না গিয়ে আপনাকে সরি বলে ফেললেই কি আপনার রাগ কমে গিয়ে মনটা ভরে উঠে না ? অবশ্যই তাই নয় কি ? তাই একইভাবে একজন ট্রেডার এর তার নিজের ভূল স্বীকার করার মানসিকতা থাকতে হবে।
০৯। ব্যবসায়ীক মন্দাভাব এর জন্য প্রস্তুতিঃ- একজন ট্রেডারকে সকল সময় সকল অবস্থার জন্য তৈরি থাকতে হবে। যে কোন সময় তার পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে পারে, সেটা হতে পারে রাজনৈতিক পরিবর্তন জলবায়ুর পরিবর্তন, পারিবারিক অবস্থার পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এছাড়াও আরও কিছু আপেক্ষিক বিষয় যায় জন্য প্রস্তুত থাকা একজন ব্যবসায়িকে ভিন্ন মাত্রা দেয়।
১০। তথ্য সম্পর্কে সচেতনতাঃ- সকল ব্যবসায়ীদের খোঁজখবর রাখা তাদের ভাবনা চিন্তাগুলো জানা।অন্তর্জাতিক খবরাখবর রাখা সফল ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে খোঁজখবর রাখা, তারা ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি অর্জন এর পথে কি কি করেছেন, কি কি বাধা মোকাবেলা করে তারা দৃঢ়ভাবে ব্যবসা পরিচালনা করেছেন সেগুলো জানার চেস্টা করা। কোন বড় ব্যবসা কেন ক্ষতির মুখে পড়ে যায় সে সম্পর্কে ধারনা রাখতে হবে। যা ট্রেডারদের সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগীতা করে।
১১। তড়িৎ সিদ্ধান্তঃ- এটা বেশ চ্যালেঞ্জিং অনেক সময় বেশ কিছু পথ হেটে আসার পর যখন মনে হয় এই পথভুল তখন অনেক পথিক অলসতায় বা ভয়ে সে পথ আর পরিবর্তন করতে চায় না যার ফলে ভূল পথে রয়ে যায় সারাটাজীবন।তারচেয়ে ভূল বোঝার সাথে সাথেই সিদ্ধান্ত নেয়ার সাহস থাকাটাও একজন ট্রেডার এর জন্য বেশ প্রয়োজনীয়।