ফরেক্স মার্কেট এর গঠনপ্রণালী

ফরেক্স মার্কেট এর গঠনপ্রণালী

 ফরেক্স ট্রেডিং শুরুর পূর্বে যে বিষয় গুলো জানা প্রয়োজন তার মধ্য অন্যতম হল ফরেক্স মার্কেট এর গঠন। আমরা সাধারনত কোন ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে যের ধরনের গঠন সম্পর্কে জানি ফরেক্স মার্কেট এর গঠন প্রণালী তার থেকে ভিন্ন। যেমন শেয়ার মার্কেট এর গঠন হল এক-কেন্দ্রিক যেখানে বায়ার এবং সেলারদের মধ্যে থাকে কেন্দ্রীয় মার্কেটপ্লেস থাকে।

বায়ার ———– কেন্দ্রীয় মার্কেট( দাম এবং স্প্রেড এর নির্ধারক)  ———-সেলার 

কেন্দ্রীয় মার্কেট এর গঠন

গাঠনিকভাবেই শেয়ার মার্কেট এককেন্দ্রিক, একক সত্তা বা নিতিনির্ধারক বৃন্দ যারা মার্কেট এর প্রাইজ নিয়ন্ত্রন করেন। সকল ট্রেডারগন সেই কেন্দ্রীয় নিতিনির্ধারক এর কাছেই যেতে হয়। প্রাইজ এর বৃদ্ধি এবং কমার পরিমাণও অনেক ক্ষেত্রে তারা নিয়ন্ত্রন করে। সহজ ভাষায় শেয়ার মার্কেট এর নিয়ন্ত্রন হয় একটি নির্দিষ্ট হাইজ থেকে। 

চলুন জেনে নেয়া যাক এটি  কিভাবে ঘটে

শেয়ার মার্কেট এ নিয়ন্ত্রণকারী ক্লায়েন্ট এর অর্ডার পরিপূর্ন করার জন্য বাধ্য থাকে, ধরে নিন যারা বিক্রি করতে চান তাদের সংখ্যা যদি যারা ক্রয় করতে চান তাদের থেকে অধিক হয়। 

নিয়ন্ত্রণকারিগণ যারা অর্ডার পূরন করতে যেহেতু বাধ্য,সেক্ষেত্রে সেলারদের অনেক শেয়ার অবক্রিত রয়ে যাবে পর্যাপ্ত বায়ার না থাকার ফলে। 

এমন যাতে না ঘটে সে লক্ষে  নিয়ন্ত্রণকারিগণ যা করবেন তা হল স্প্রেড বাড়িয়ে দিবেন বেশ করে, বা ট্রানজেকশন এর খরচ বাড়িয়ে দিবেন যাতে করে সেলারগণ মার্কেট এ প্রবেশই  না করতে পারেন। অন্য কথায় এর অর্থ দ্বারায় নিয়ন্ত্রণকারিগণ যে প্রাইজ এর উল্লেখ্য করেন তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন যখনই তা করা প্রয়োজন হয়। 

স্পট ফরেক্স মার্কেট কেন্দ্রীয় ভাবে নিয়ন্ত্রণমুক্ত 

ফরেক্স মার্কেট এ কোন একটি নির্দিষ্ট এক্সচেঞ্জ এর উপর নির্ভর করে না। যেমন স্টক মার্কেট এ ট্রেড এর জন্য আমাদের কোন দেশের কেন্দ্রীয়ভাবে নির্ধারিত,  নির্দিষ্ট স্টক এক্সচেঞ্জ এর মাধ্যমে, নির্ধারিত রেট এ ট্রেড করতে হয় যেমন নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ। 

ফরেক্স মার্কেট কোন একটি নির্দিষ্ট কারেন্সির উল্লেখিত প্রাইজ বা অফার প্রাইজ, ভিন্ন ভিন্ন কারেন্সি ডিলার অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। 

ফরেক্স মার্কেট এর গ

প্রথমে এটি বুঝতে একটু সময় লাগলেও সময়ের সাথে সাথে আপনি বুঝতে পারবেন এটি ফরেক্স মার্কেট এর একটি চমৎকার দিক। 

ফরেক্স মার্কেট এর আকার এত বিশাল, এবং কারেন্সি ডিলারদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও অনেক বেশী। যার ফলে আপনি প্রায় সকল সময়েই সর্বোত্তম ডিল পেয়ে যেতে পারেন। যে কোন ট্রেডার এর জন্যই এটি আকর্ষণীয়, তাই নয় কি ?

ফরেক্স এর আরও একটি চমৎকার বিষয় হল, আপনি যে কোন স্থান থেকে, যে কোন সময় ট্রেড করতে পারেন। এটি একটি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সর্বদা চলমান থাকে সপ্তাহের ৫ দিন ২৪ ঘন্টা। 

স্তর অনুযায়ী ফরেক্স মার্কেট এর গঠন  

যদিও ফরেক্স মার্কেট এ কোন কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ থাকে না, কিন্তু এর মানে এই নয় যে এখানে যা ইচ্ছে তাই সংঘটিত হতে থাকে এর অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে একটি ক্রম অনুসারে স্তরে স্তরে সাজানো থাকে যাতে করে মার্কেট এ স্তিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। ফরেক্স মার্কেট এর গঠন এর স্পট ধারণা পেতে নিচে দেয়া চিত্রটি আপনাকে সহায়তা করবে। 

ফরেক্স মার্কেট এর অংশগ্রহণকারী

ফরেক্স মার্কেট এর এই স্তরে বিন্যাস এর একেবারে উচুতে অবস্থান করে বড় বড় ব্যাংকগুলো যারা নিজ দেশ এবং আন্তর্জাতিক লেনদেন গুলো পরিচালনা করে। এ লেনদেন দুটি ব্যাংকের মধ্যে দ্বিপাক্ষিকভাবে অথবা ভয়েস এর মাধ্যমে বা ইলেকট্রনিক ব্রোকার ( যেমন ইবিএস মার্কেট এবং রয়টার্স ম্যাচিং এর মাধ্যমে) 

এই দুই কোম্পানির মধ্যে এ প্রতিদ্বন্দ্বিতা ( যা এখন রিফিনিটিভ নামে নতুনভাবে মোড়কীকরণ হয়েছে) অনেকটা কোকাকোলা এবং পেপসির মতো। 

তারা এক কোম্পানি অন্য কোম্পানির সাথে প্রতিনিয়ত, ক্লায়েন্ট বৃদ্ধি এবং মার্কেট শেয়ারের বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে চায়। যদিও দুই কোম্পানিই প্রায় সকল কারেন্সি পেয়ার এর বাই সেল এর সুযোগ দেয়, কিন্তু কিছু কিছু কারেন্সি পেয়ার একটিতে, অন্যটির চেয়ে অধিক তারল্যে থাকে। 

যেমন ইবিএস প্লাটফর্ম এ EUR/USD,USD/JPY,EUR/JPY, EUR/CHF, USD/CHF এই কারেন্সি পেয়ার গুলো অধিক ভলিউম থাকে।  

যখন রয়টার্স প্লাটফর্ম এ GBP/USD, EUR/GBP, USD/CAD, AUD/USD, NZD/USD এই কারেন্সি পেয়ার গুলো অধিক ভলিউম এ ট্রেড হয়। 

যে সকল ব্যাংকগুলো আন্তব্যাংক মার্কেট এর অংশ তারা প্রত্যেকেই একে অপরের অফার করা রেট দেখতে পায়, যদিও এই প্রাইজ এ সবাই এই প্রাইজ এ ট্রেড করতে পারবে।  

এটি অনেকটা আমাদের স্বাভাবিক ব্যাবসায়িক লেনদেন এর মতোই, লোন দেয়া নির্ভর করে দুই পার্টির সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে। যদি আপনি কোন স্থানীয় ব্যাংক এ লোন এর জন্য আবেদন করেন, তাহলে আপনি ততই বড় লোন পাবেন এবং সুবিধাজনক রেট আশা করতে পারেন যতটা আপনার সাথে ব্যাংক এর সম্পর্ক লেনদেন এর উপর ভিত্তি করে। 

এই স্তর এর পরের অবস্থানেই রয়েছে হেজ ফান্ডস, করপোরেশন, রিটেইল মার্কেট মেকার, এবং রিটেইল ইসিএন ব্রোকারগুলো। 

এই সকল প্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেন সংক্রান্ত সম্পর্ক অতটা স্পষ্ট নয় আন্তব্যাংক মার্কেট এর সাথে, যার ফলে তাদের লেনদেন হয় অন্যান্য কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। 

এর মানে হল তাদের অফার করা রেট, আন্তব্যাংক মার্কেট সাথে সংযুক্তদের তুলনায় কিছুটা বেশি। 

এবং এ স্তরের একেবারে সর্বনিম্ন স্তরে রয়েছে রিটেইল ট্রেডারগন। যদিও ফরেক্স মার্কেট এ অংশগ্রহণ করার জন্য যথেষ্ট সুযোগ আমাদের থাকার কথা না থাকলেও, ইন্টারনেট এর বিপ্লব এর ফলে, ইলেকট্রনিক ট্রেডিং সহজ হয় এবং রিটেইল ব্রোকার এর সহায়তায় এখন আমাদের মতো ছোট বিনিয়োগকারীগনও এখন মার্কেট এ অংশগ্রহণ করতে পারছি। 

তারা আমাদের অল্প পূজির মাধ্যমেই বড় অংশগ্রহণ কারীদের সাথে ট্রেডিং এর সুযোগ করে দেয়

ফরেক্স মার্কেট এর টোটাল ভলিউম ৬.৬ ট্রিলিয়ন ডলার, ট্রাইনিয়াল কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর এফএক্স সার্ভে এবং ওভারদ্যা কাউন্টার ডেরিভেটিভ মার্কেটস, যা ২০১৬ সালে ছিল ৫.১ ট্রিলিয়ন। যার মধ্যে প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ডলার ট্রেড হয় স্পষ্ট মার্কেট এ, ফরোয়ার্ডস এ হয় ১ ট্রিলিয়ন ডলার, ফরেন এক্সচেঞ্জ সোয়াপ এ হয় ৩.২ ট্রিলিয়ন ডলার,  কারেন্সি সোয়াপ ১০৮ বিলিয়ন ডলার,  অপশন এবং অন্যান্য ২৯৪ বিলিয়ন ডলার। 

ফরেক্স ট্রেডিং এর সবচেয়ে বড় সেন্টার ভলিউম অনুযায়ী ২০১৯ সালের জরিপএ

০১. ব্রিটেন – ৪৩.১%

০২. আমেরিকা – ১৬.৫%

০৩. সিংঙ্গাপুর- ৭.৬ %

০৪. হংকং – ৭.৬ %

০৫. জাপান – ৪.৫ % 

০৬. সুইযারল্যান্ড

০৭. ফ্রান্স – ২% 

০৮. চায়না – ১.৬%

০৯. জার্মানি – ১.৫% 

১০. আস্ট্রেলিয়া- ১.৪ % 

আপনি এখন ফরেক্স মার্কেট এর গঠন সম্পর্কে ধারনা লাভ করেছেন এখন আমরা আরও অন্যান বিষয়ের দিকে আলোকপাত করবো।