সম্ভবত এই সময়টাই হলো একটা ট্রেডার এর জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং যখন ট্রেড চলতে থাকে। ট্রেডিং করার জন্য যখন প্রস্তুতি নেয়া হয় তখন মনে হয় এই সময় ট্রেডিং এর সময় আমি তাই করবো যা আমার প্লান এর মধ্যে রয়েছে এর বাইরে আমি কোন অবস্থায়ই অন্যথায় করবো না। কিন্তু ট্রেড নেয়ার পর আমাদের মধ্যে এক ধরনের অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়,অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা,ভয়,শংকা,আশা,হতাশা এমন আরও যত রকমের অনূভুতি আছে সব আমাদের মনে ভর করে। এটা বলতে যেয়ে আমার নৌকা বা জাহাজ পানিতে ভাসানোর কথা মনে হচ্ছে, যেমন যত প্লান করে ই নামানো হোক না কেন যখন ঝড় আসে তখনই বুঝা যায় আমাদের মনের অবস্থা কেমন হয় সকল সঠিক প্লানই মনে হয় অনিশ্চিত তখন কেমন অনুভব হয় তা সেই নাবিকই বলতে পারে, কিন্তু এর মধ্যে থেকেই সফল নাবিক পাড়ি দেয় মহাসমুদ্র। কতো যে কথা মনে হতে থাকে, যদি স্টপ লস টাচ করে প্রাইজ উঠে যার, বা নিচে নেমে যায় তাহলে কি হবে ,যদি এই ট্রেড গুলো লস করি তাহলে কতটা ক্ষতি হবে একাউন্ট এর। আবার কিহবে যদি টেক প্রফিট এর কাছাকাছি যেয়ে আবার স্টপ হিট করে। না কি এস এল টা আর একটু বাড়িয়েই দিব? নাকি স্টপ তুলেই দিব এমন নানা রকমের ভাবনায় মন বিচলিত হতে থাকে।
যখনই আপনার বিনিয়োগকৃত অর্থের মাধ্যমে ট্রেড শুরু করবেন তখন মানসিকতার পরিবর্তন
ট্রেড শুরু করার সাথে সাথে আপনার ইমোশন থাকবে ড্রাইভিং সিটে, যুক্তিযুক্ত এবং বস্তুনিষ্ঠ চিন্তা থাকে শুধুমাত্র যাত্রী আসনে। যদি আপনি এটিতে সন্ধেহ করেন তাহলে প্রথমে পেপার ট্রেডিং করুন এবং তারপর নিজের ফান্ডে ট্রেড শুরু করুন। আপনি খুবই দ্রুত উপলব্ধি করবেন যে কিভাবে আপনার দুশ্চিন্তা, প্রত্যাশা, এবং উৎকণ্ঠা দ্বারা আপনার মার্কেট এর প্রতি দেখার দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তিত হতে থাকে বা প্রভাবিত হয়। এটি আমাদের সাধারণ অভ্যাস যে আমরা মার্কেটকে তেমন ভাবেই দেখি যেমন আমরা দেখতে চাই, যা মার্কেট বাস্তবে তা নয়। এমন কয়বার ঘটে যে কোন শেয়ার/কারেন্সি পেয়ার একজন কিনেছেন বা সেল করেছেন এবং তারপরই মার্কেট তার বিপরীতে যেতে থাকে এবং সাথে সাথে ঐ ট্রেডার লস মেনে নিয়েছেন ? সাধারণত নয় তাই নয় কি ?
যদিও মার্কেট এ আশা করার কোন সুযোগ নেই, কিন্তু ট্রেডারগন ঠিকই তাদের নেয়া ট্রেড এর সকল পক্ষের সংবাদ সংগ্রহ করেন এই আশায় যে মার্কেট তার নেয়া ট্রেড এর পক্ষে আসবে। যখন প্রাইজ আরও বিপরীতে যেতে থাকে। মূলত মার্কেট আমাদের কিছু বলার প্রচেষ্টা করে এবং বলতে থাকে কিছু আমাদের ইমোশন এর ফলে সে কথা শুনতে পারি না বা শুনতে চাই না।
একইভাবে আমাদের জীবনেও এমন অবস্থার সম্মুখীন হতে হয় যখন বইয়ে পড়া কথাগুলো থেকে কোন পথ খুজে পাওয়া যায় না। নিজেকে খুব একা মনে হয়, মনে হয় আমার এই সমস্যায় বুঝিবা আর কাউকেই পড়তে হয়নি, বা এই সমস্যা থেকে উত্তরন এর পথ মনে হয় নেই। কিন্তু কিছুদিন সময় চলে যেতে না যেতেই সেই একই সমস্যাগুলো আর তেমন জটিল মনে হয় না।
এমন অনেক বিষয় মনে হতে থাকে ট্রেড চলাকালীন সময়ে, যার সবগুলো ভাষায় বোঝানো যাবেনা। কিন্তু মজার বিষয় মনে হয় এটাই যে এই একই ভাবনাগুলো প্রতিটি সফল ট্রেডারও হয় বা হতো। এই কষ্টকর এবং থ্রিলিং অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই গড়ে উঠে এক এক জন ট্রেডার যারা দীর্ঘসময় ধরে টিকে থাকে এবং জীবনকে উপভোগ করে।

ট্রেড চলাকালীন সময়ে আমাদের মনের এই অবস্থার কারন হতে পারে যে বিষয়গুলো তা হলোঃ
১. অতি বাস্তব কল্পনাঃ যখনই কেউ ট্রেড সম্পর্কে জানতে শুরু করে এবং সিদ্ধান্ত নেয় ট্রেড করবে সে ছোট একটি ফান্ড এর ব্যবস্থা করেই জীবনের যত ঘাটতি রয়েছে তা পূরন করার স্বপ্নে বিভোর হয়ে যায়। এই ফান্ড এর মাধ্যমেই জীবনের যত সুখ কল্পনাগুলো তার সাথে জুড়তে থাকে। ভুলে যায় ছোট বেলা থেকে শুরু করা হাটি হাটি পা পা করে স্কুলে যাওয়া শুরু সেই থেকে সুদীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে প্রচেষ্টায় একজন ছাত্র উতরে যায় পড়াশোনার একটি পর্যায়ে যেখান থেকে সে প্রচেষ্টায় রত হয় অর্থ উপার্জন এর তারপরও খুব অল্প সংখ্যকই তাদের আশানুরূপ উপার্জন এ সাফল্য অর্জন করে। সেখানে কিভাবে এই কিছু ফান্ড আমাদের জীবনকে বদলে দিতে পারে?
২. ট্রেড সম্পর্কে পড়াশুনা করার আগ্রহ কমঃ অল্প কিছু বেতন এর আশায় আমরা দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়েএ সকল পড়াশোনা শেষ করার,পড়ও আবার চাকরির জন্য কোচিং করি। আর সেখানে ট্রেড এর বিশদ, বিপুল ভুবনে শুধু কিছুটা জেনেই ঝাপিয়ে পড়ি আয় এর লোভে।
৩. কোন সিস্টেম না থাকা বা থাকলেও তা অনুসরণ না করাঃ অধিকাংশ অপেশাদার ট্রেডারদের নিজস্ব কোন সিস্টেম থাকে না যার ফলে তারা আনুমানিক বা কারও কাছে শুনে তেমন কোন কারণ ছাড়াই এন্ট্রি নিয়ে নেয় যাতে করে প্রফিট হলেই তার অতিরিক্ত বিশ্বাস চলে আসে আর না হলে মন ভেঙ্গে যায় যা তাকে আরও ভুল ট্রেড এন্ট্রি নেয়ার প্রেরণা যোগায়। এই সকল ট্রেড চলাকালীন সময়ে অত্যন্ত মানসিক চাপ সামলাতে হয়।
০৪. ট্রেড আসলে কি উপলব্ধি না করাঃ ট্রেড আসলে কি, এর উদ্দেশ্য কি, কেন ট্রেড? এই রকম বেশ কিছু বিষয় যা ট্রেড করার পূর্বে জানার প্রয়োজন হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপরিপক্ক ট্রেড করতে আগ্রহীগন তা জানান না। যার ফলে দুই একবার লাভ করলেই মনে করতে থাকে এত কিছু জেনে কি হবে আমি তো এমনিতেই ভালো করতে পারছি, কেউ এটা ভাবতে শুরু করে যে আমি তো জন্মগত প্রতিভা। কিন্তু যখনই কোন ট্রেড লস এ যেতে থাকে এবং বেশ কিছুদিন ধরে লস এ আটকে থাকে তখনই সে হতাশ হয়ে যায় এবং ট্রেড সম্পর্কে নানা নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা শুরু করে। এবং যখন একাউন্ট সম্পূর্ণরুপে হারিয়ে যায় তখন অধিকাংশই পুরোপুরি হারিয়ে যায়।
০৫. ব্যাক্তিগত জীবনে অস্থিরঃ ব্যাক্তিগত জীবনে যারা বেশ অস্থির, তারা যখন ট্রেড করতে আগ্রহী হয় এবং কিছুটা জেনেই ঝাপিয়ে পড়ে। তাদের ক্ষেত্রে মার্কেট এর ছোট ছোট উঠানামার গ্রাফ এর সাথে সাথেই তাদের হার্ট এর পালসও উঠানামা করতে থাকে।
০৬. প্রতিশ্রুতি ভঙ্গঃ যারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে অভ্যস্ত তারা ট্রেড এর সময়ও নিজের সাথে নিজেরই করা প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়। তাই ট্রেড নেয়ার সময় থেকে শুরু করে প্রতিটি মুহুর্তেই উদ্দিগ্ন থাকে।
০৭. কথা না শুনতে চাওয়ার প্রবণতাঃ যাদের কথা শুনতে চাওয়ার প্রবনতা নেই তাদের ট্রেড এর সময়ও এই অভ্যাস এর প্রতিফলন ঘটে, মূলত মার্কেট আমাদের কিছু বলার প্রচেষ্টা করে এবং বলতে থাকে, কিন্তু কথা শুনার জন্য মানসিকতা না থাকার ফলে এই কথা শুনারও ধৈর্য থাকে না।

ট্রেড চলাকালীন সময়ে একজন ট্রেডার অবস্থা আরা পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে একজন ছাত্রের অবস্থা অনেকটা একই রকম সারা বছর যতই পড়াশুনা করা হোক না কেন, পরীক্ষার সময়ের অনুভূতি অবশ্যই ভিন্ন। তেমনিভাবে ট্রেড করার সময়ও অনূভূতি একেবারেই ভিন্ন। এর থেকে উত্তরণের জন্য একজন ভালো ছাত্রের যেমন পূর্বপ্রস্তুতি থাকার ফলে পরীক্ষার হলে আবেগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়, তেমনিভাবে রিয়েল ট্রেড শুরু করার পূর্বেও প্রস্তুতি প্রয়োজন যা তাদের মার্কেট ট্রেড এর সময় আবেগ নিয়ন্ত্রনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। ট্রেড এর পূর্বে জানা প্রয়োজন এমন গুণাবলীগুলো জানতে এই পোষ্টটি পড়তে পারেন।