কারেন্সি পেয়ার কি এবং কোন কোন কারেন্সি পেয়ার ফরেক্স এ অধিক ট্রেড হয় ?

কারেন্সি পেয়ার কি এবং কোন কোন কারেন্সি পেয়ার ফরেক্স এ অধিক ট্রেড হয় ?

ফরেক্স এ সকল বিনিময় হয় এক মুদ্রার সাথে অন্য কোন একটি মুদ্রার, তাই ফরেক্স এর সকল উদ্রিতিতে(quotes) এক জোড়া মুদ্রা জড়িত। আপনি যখন কোন সুপারশপ থেকে কোন কিছু কেনেন অর্থের বিনিময়ে তখন আপনাকে বিনিময়ে কোন পন্য দেয়া হয়, কিন্তু কোন মূদ্রা বিনিময় এক্সচেঞ্জ থেকে টাকা দিয়ে আপনি অন্য কোন কারেন্সিই কিনেন তাই নয় কি? ফরেক্স এ তেমনি আপনি অর্থের বিনিময়ে যা পান তাও অর্থ, যে দেশের কারেন্সির বিনিময়ে আপনি যে দেশের কারেন্সি ক্রয় করছেন তার পরিমান নির্ভর করে ওই দুই দেশের মুদ্রার তখনকার পারস্পরিক রেট এর উপর। 

মার্কিন ডলার এর তুলনায় গ্রেট ব্রিটিশ পাউন্ড এর বিনিময় হার $১.৩৮০০ এর মানে হলো আপনি এক জিবিপি দিয়ে ১.৩৮ মার্কিন ডলার পাবেন। ডলার এর বিপরীতে সুইস ফ্রান্ক. ৯৪০০ এর মানে হলো  ১ ডলার এর বিনিময়ে আপনি .৯৪০০ সুইস ফ্রাঙ্ক পাবেন। 

জিবিপি এর বিপরিতে মার্কিন ডলার এটি একটি পেয়ার,  এবং মার্কিন ডলার এর বিপরীতে সুইস ফ্রান্ক আবার আলাদা পেয়ার। 

সকল পেয়ারে ই ডলার থাকে না ইয়োরো এবং জিবিপিও পেয়ার হয়, কানাডিয়ান ডলার এর সাথে জেপিওয়াই ও কারেন্সি পেয়ার। কিন্তু যত কারেন্সি পেয়ার আপনি ফরেক্স মার্কেট এ লক্ষ্য করবেন সব গুলোই দুটি কারেন্সির পেয়ার। 

তিন অক্ষরের সংক্ষিপ্ত শব্দ মনে রাখা বা মুখস্ত করা 

ফরেক্স ট্রেডিং এর সময় প্রতিটি কারেন্সির তিন অক্ষরের সংক্ষিপ্ত শব্দ মূখস্ত করতে হবে। বা মনে রাখলেই হবে৷ 

এগুলো মনে রাখা সহজ এগুলো প্রতিটি কারেন্সির সম্পুর্ন বাক্য থেকে প্রথম অক্ষর গুলো নিয়ে গঠিত হয় যেমন United States Dollar এর প্রথম তিনটি অক্ষর নিয়ে গঠিত হয় USD. একেবারে সহজে মনে রাখার জন্য যে কোন দেশের কারেন্সির নাম এর এই তিনটি অক্ষর এর দ্বারা গঠিত শব্দের প্রথম দুই অক্ষর হলো ওই দেশের নাম যেমন USD এর ক্ষেত্রে US দেশের নাম এর সংক্ষিপ্ত রুপ এবং D যা ডলার এর সংক্ষিপ্ত রুপ।

এভাবে মনে রাখা বেশ সহজ। সাউথ আফ্রিকান রেন্ড এর ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম যেমন শুরু হওয়ার কথা S দিয়ে কিন্তু শুরু হয়  Z দিয়ে ( ডাচ উচ্চারণ যুইড- আফ্রিকানাসে রেন্ড)। সুইস ফ্রাঙ্ক এর ক্ষেত্রে আপনার মনে হতে পারে যে SWF হওয়ার কথা কিন্তু CHF কেনো, সুইজারল্যান্ডের নাম এর ল্যাটিন ফর্ম  প্রকাশ হচ্ছে  CH Confoederatio Helvetica. 

মেজর কারেন্সি গুলো 

০১. USD- ইউএসডলার

০২. GBP- গ্রেট ব্রিটিশ পাউন্ড

০৩. EUR- ইয়োরো

০৪. CHF- সুইস ফ্রাঙ্ক 

০৫. JPY- জাপানিজ ইয়েন 

০৬. CAD- কানাডিয়ান ডলার 

০৭. AUD- অস্ট্রেলিয়ান ডলার 

০৮. NZD- নিউজিল্যান্ড ডলার 

এছাড়াও রয়েছে 

০৯. SGD- সিঙ্গাপুর ডলার

১০. ZAR- সাউথ আফ্রিকান রেন্ড 

এছাড়াও আরও কারেন্সি রয়েছে তবে এই কারেন্সিগুলো তেই অধিকাংশ ভলিউম ট্রেড হয়। 

কোন কোন কারেন্সি পেয়ার গুলো সবচেয়ে বেশি ট্রেড হয়?

প্রায় সকল দেশের কারেন্সিই ট্রেড হতে পারে, কিন্তু কিছু কারেন্সি পেয়ার অন্যান্য কারেন্সির চেয়ে অধিক ট্রেড হয়। সকল প্রাথমিক কারেন্সি পেয়ার গুলো ইউএস ডলার এর সাথে পেয়ার থাকে, যে যে মেজর কারেন্সি পেয়ার গুলো ফরেক্স মার্কেট এ ট্রেড হয় সেগুলো হলো 

=> EUR/USD- এই কারেন্সি পেয়ার এ ইউএস ডলার ইউরোর বিপরীতে ট্রেড হয়। এটি ইয়োরো ডলার নামে ডাকা হয়। 

=> USD/JPY – এই কারেন্সি পেয়ার এ ইউএস ডলার, জাপানিজ ইয়েন এর বিপরীতে ট্রেড হয়। 

=> USD/GBP- এই কারেন্সি পেয়ার এ ইউএস ডলার গ্রেট ব্রিটেন এর পাউন্ড এর বিপরীতে ট্রেড হয়। এটিকে পাউন্ড-ডলার নামে উল্লেখ করা হয়। 

=> USD/CHF- এই কারেন্সি পেয়ার এ ইউএস ডলার সুইস ফ্রাঙ্ক এর বিপরীতে ট্রেড হয়। এটিকে ডলার সুইসি নামে উল্লেখ করা হয়।

=> USD/CAD- এই কারেন্সি পেয়ার এ ইউএস ডলার কানাডিয়ান ডলার এর বিপরীতে ট্রেড করা হয়। এটিকে ডলার- লুনি বলে উল্লেখ করা হয়। 

=> AUD/USD- এই কারেন্সি পেয়ার এ ইউএস ডলার অস্ট্রেলিয়ান ডলার এর বিপরীতে ট্রেড করা হয়। এটিকে অসি ডলার নামে উল্লেখ করা হয়।

=> NZD/USD- এই কারেন্সি পেয়ার এ ইউএস ডলার নিউজিল্যান্ডের ডলার এর বিপরীতে ট্রেড হয়। এটিকে কিউই ডলার নামে উল্লেখ করা হয়। 

ইউএস ডলার এর সাথে পেয়ার না হয়েও অনেক কারেন্সি পেয়ার রয়েছে যেগুলোকে ক্রস কারেন্সি পেয়ার বলে। সাধারণ ক্রস কারেন্সি পেয়ার গুলোর সাথে ইয়োরো এবং জাপানিজ ইয়েন থাকে। 

ফরেক্স মার্কেট এ ভলিয়ম অনুযায়ী সবচেয়ে অধিক যে কারেন্সি পেয়ার গুলো ট্রেড হয়

এটি শতভাগ সঠিক থেকে কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে তবে ৫-১০% এর অধিক নয়।
উৎস

কারেন্সিগুলো অবশ্যই পেয়ার এ ট্রেড হয়, গানিতিকভাবে ৮ টি কারেন্সি থেকে ২৭ টি ভিন্ন ভিন্ন কারেন্সি পেয়ার রয়েছে। সবচেয়ে অধিক ভলিউম যে কারেন্সি পেয়ার এ তা হল EUR/USD মোট ট্রেডিং ভলিউম এর প্রায় ২৮%, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লিকুইড কারেন্সি পেয়ার হল USD/JPY যে পেয়ার এ ট্রেড হয় ১৩%, তৃতীয় লিকুইড কারেন্সি পেয়ার হল GBP/USD, এতে ট্রেড হয় মোট ভলিউম এর প্রায় ১১%। এছাড়াও    লিকুইডিটি বিবেচনায় যে ১৫ টি কারেন্সি পেয়ার যেগুলো সবচেয়ে অধিক ট্রেড হয়। সেগুলো নিম্নে উল্লেখ্য করা হলোঃ- 

01. EUR/USD                                      10. EUR/JPY

02. USD/JPY                                         11. EUR/CHF

03. GBP/USD                                        12. EUR/GBP

04. AUD/USD                                         13. AUD/CAD

05. USD/CAD                                       14. GBP/CHF 

06. NZD/USD                                        15. GBP/JPY

07. USD/CHF                                          16. CHF/JPY

08. EUR/CAD                                        17. AUD/JPY

09. EUR/AUD                                        18. AUD/NZD

এই ১৮ টি কারেন্সি পেয়ারই সম্মিলিতভাবে ফরেক্স মার্কেট এর বেশিরভাগ ভলিয়ম ট্রেড হয়। মাত্র এই কয়েকটি পেয়ার থেকে বাছাই করে ট্রেড করা যায় যা শেয়ার মার্কেট এর হাজারও অপশন থেকে বাছাই করার চেয়ে অধিক সহজ, যা আরও আকর্ষণীয় করেছে ফরেক্স ট্রেডকে।

ফরেক্স ট্রেডিং এ প্রচলিত কিছু ভাষা 

ট্রেডিং শুরু করার পূর্বে কিছু ট্রেডিং সংক্রান্ত ভাষা জেনে নিই, যেগুলো ফরেক্স মার্কেট এ ব্যবহৃত হয়। যেমন গ্রেট ব্রিটিশ পাউন্ড এর প্রচলিত নাম “কেবল”।  এই শব্দটি ১৮৫৮ সালে ব্যবহৃত ট্রান্সএটল্যান্টিক টেলিগ্রাফ কেবল কে বোঝায়। সেই সময় ইউএস ট্রেডারদের জন্য ইউকে পাউন্ড ছিল শীর্ষ কারেন্সি, এবং তারা ইউকে পাউন্ড এর প্রাইজ জানতে তারা কেবল এর প্রাইজ জিজ্ঞাসা করতো। সেই সময় যে ট্রেডারগন প্রাইজ নির্ধারণ করতো তাদের বলা হতো কেবল ডিলারস, এমনকি এখনও যে ট্রেডারগন ব্যাংক এ ব্রিটিশ স্টারলিং ট্রেড করে তাদের কেবল ডিলার বলে ডাকা হয়। 

নিউজিল্যান্ড ডলারকে ডাকা হয় কিউই বলে, কিউই পাখির জন্য তারা বিখ্যাত তাই। কানাডিয়ান ডলার কে লুনি বলে ডাকা হয় কারন কানাডার ১ ডলার কয়েন এর এক পাশে তাদের জাতীয় পাখি লুন এর ছবি রয়েছে। 

ট্রেডারগন যখন জানতে চায় কেবল এর প্রাইজ কত, এর মানে হলো তারা জানতে চায় ইউএস ডলার এর বিপরীতে ইউকে পাউন্ড স্টারলিং এর প্রাইজ কত। তেমনিভাবে যখন লুনি বা কিউই এর প্রাইজ জানতে চায় এর মানে হল ওই প্রাইজ যে প্রাইজ এ একজন নিউজিল্যান্ড ডলার বা কানাডিয়ান ডলার কিনতে বা বিক্রি করতে আগ্রহী। 

নরওয়ের কারেন্সিকে নরওয়েজিয়ান ক্রোন কে নকি নামে ডাকা হয়, এবং সুইডিশ ক্রোন কে ডাকা হয় স্টকি নামে। নকি বা স্টকির প্রাইজ প্রাইজ জানতে আগ্রহী ব্যক্তিগন হয়তো ইউএস ডলার এর বিপরীতে নরওয়েজিয়ান ক্রোন বা সুইডিশ ক্রোন ক্রয় বা বিক্রয় করতে চান। আপনি যদি ইয়োরো এর বিপরীতে নরওয়েজিয়ান ক্রোন এর প্রাইজ জানতে আগ্রহী হন তাহলে আপনি জিজ্ঞাসা করতে পারেন ইয়োরো- নকি এই নামে। মেক্সিকান পেসো হবে মেক্স, এবং হ্যাঙ্গেরিয়ান ফরিন্ট হবে হাফ। 

বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় এর ভাষা অন্যান্য ভাষার থেকে আলাদা কিছুই নয় এখানেও নিয়ম রয়েছে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে রয়েছে নিয়মের ব্যাতিক্রমও।  ইয়োরো এর বিপরীতে ইউএস ডলার এর প্রাইজ জানতে একজন ট্রেডার  ইয়োরো- ডলার এর প্রাইজ জানতে না চেয়ে একজন ট্রেডার সাধারণভাবেই জিজ্ঞাসা করতে পারেন ” এখন ইয়োরোর প্রাইজ কত?”। তেমনিভাবে কিউই প্রাইজ মানে হলো নিউজিল্যান্ড ডলার এর প্রাইজ কতো ইউএস ডলার এর বিপরীতে। 

সারসংক্ষেপ

ফরেক্স মার্কেট এ সকল কারেন্সিই পেয়ার এ ট্রেড হয়, সবচেয়ে অধিক ট্রেডিং কারেন্সি পেয়ার হলো ইয়োরো-ডলার, এবং তারপরই ইউএস ডলার এবং জাপানিজ ইয়েন। ফরেক্স ট্রেডিং এ ব্যবহৃত কিছু ভাষা যেগুলো ট্রেডিং এর সময় চর্চা হয় এগুলো জেনে নিলে ট্রেডিং সংক্রান্ত আলোচনা করা এবং বুঝতে সহজ হবে।