দুই পার্টির মধ্যে ( পণ্য, সেবা, তথ্য) বিনিময়ই হল ব্যবসা, ট্রেডিং।
প্রয়োজনই হল ট্রেডিং এর মূল, যখনই কোন ব্যক্তি বা একাধিক ব্যক্তিগন এর মধ্য এই অনূভুতি হয় যে তার কোন কিছুর অভাব বোধ হয় তখনই কেউ না কেউ বা কোন একাধিক ব্যক্তির দল সমষ্টিগতভাবে সেই অভাব দূর করার লক্ষ্যে এগিয়ে আসে এবং বিনিময় সংগঠিত হয় অর্থাৎ ব্যবসা বা ট্রেডিং হয়।

আমরা মানুষ জন্মগতভাবেই পরিপূর্ণভাবে জন্মগ্রহণ করি নি যার ফলে আমাদের অভাব এর পরিপূর্ণতার জন্য আমাদের অন্যের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। প্রথম ট্রেড সংগঠিত হয় বিনিময় প্রথায় যেখানে পণ্য বা সেবার বিনিময়ে অন্য আরেকজন অন্য কোন পণ্য বা সেবা নিতেন ওই সময় কোন ধরনের বিনিময় মাধ্যম ছিল না।
যখন এই বিনিময় প্রথায় সমস্যা হল বা বাধার সম্মুখীন হল, তখন থেকেই মিডিয়াম অফ এক্সচেঞ্জ এর প্রয়োজন হল, ভিবিন্ন রকমের বিনিময় মাধ্যেম এর ব্যবহার যুগের পর যুগ হয়ে আসছে যেমন পশুর চামড়া,মাথার খুলি, বিভিন্ন ধাতু , কখনও কখনও অস্ত্রও বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল ভিন্ন ভিন্ন সময়ে। বিনিময় এর মাধ্যম হিসেবে অর্থ প্রচলিত হয়ে আধুনিক সভ্যতা পর্যন্ত আসতে প্রায় ৩০০০ হাজার বছর সময় লেগেছে।
যখন দুই পার্টির মধ্যে কোন বিনিময় সংগঠিত হয় তখন তা দ্বিপাক্ষিক বানিজ্য, যখন তা একাধিক পার্টির মধ্যে সংগঠিত হয় বহুপাক্ষিক বানিজ্য বলে। ট্রেড বর্তমান বৈশ্বিক বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করেছে, ট্রেডিং এখনকার মত সহজ আর কখনই ছিল না, এখন কয়েক সেকেন্ড এর মধ্যে লাখ, কোটি ডলার এর ট্রেড সংগঠিত হয়।
ফরেক্স মার্কেট এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৭১ সালে, আর তা সম্ভব হয়েছিল টেকনোলজি, কমিউনিকেশন এবং রাজনৈতিক অগ্রসারতার সমন্বয়ের মাধ্যমে। বৈদেশিক মুদ্রার আদান প্রদান এর ধারণা লাভ করা যায় মধ্যযুগ থেকেই যখন কোন দ্রব্য সামগ্রীর ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য কাগুজে নোট এর প্রচলন করা হয়। ১৮৭৬ সালে স্বর্ন ভিত্তিক মূদ্রা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল এবং এই ব্যবস্থায় মুদ্রার মূল্যমান স্বর্নের মানের উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হতো। ফলে মোট স্বর্নের মূল্যের সমপরিমাণ কাগুজে মুদ্রা বা নোট কোন দেশের জন্য বরাদ্দ রাখা হত। এটি একটি ভালো পদ্ধতি ছিল, কিন্তু স্বর্নের মূল্যে আকস্মিক পরিবর্তন এর ফলে এর ত্রুটি লক্ষ্যে করা যায়, এবং এর বিলুপ্তি ঘটে।

এই পদ্ধতি বাতিল করা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুর সময় যখন ইউরোপের দেশগুলোতে তাদের বিশাল সব প্রকল্পগুলোকে বাস্তবায়িত করার মতো পর্যাপ্ত অর্থ ছিলনা। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হয় সকল মুদ্রার মান নির্দিষ্ট হবে এবং আমেরিকান ডলার হবে মুদ্রার জন্য নির্ধারিত সংরক্ষিত ভিত্তি যা স্বর্ন এর বিপরীতে একমাত্র পরিমাপকৃত মুদ্রা। এই ব্যবস্থাকে বলা হয় ব্রেটন উডস পদ্ধতি যা ১৯৪৪ সালে কার্যকর হয়। ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দেয় যা তারা আর স্বর্নের বিপরীতে ডলার এর বিনিময় এ আগ্রহী নয় যা বৈদেশিক সংরক্ষণ হিসেবে রাখা আছে। যার ফলে ব্রেটন উডস পদ্ধতিও বাতিল হয়ে যায়। ১৯৭১ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ভিয়েতনাম যুদ্ধের অর্থ যোগানের জন্য ডলারকে স্বর্নের আদর্শ মান থেকে তুলে নেন। এই প্রক্রিয়াটি সরকারি নিতিতে পরিবর্তন আনে যার ফলস্বরূপ ডেবিট- ক্রেডিট প্রথা। ১৯৭৩ সালের দিকে অধিকাংশ উন্নত মুদ্রাই “Free-floating” হয়ে যায়। এর মাধ্যমেই আধুনিক বৈদেশিক মুদ্রার মার্কেট এর প্রবর্তন হয় যা ১৯৯০ সালের দিকে বর্তমান কম্পিউটারাইজ এবং সয়ংক্রিয় রুপ নেয়।