আরএসআই ইন্ডিকেটর

আরএসআই ইন্ডিকেটর কি এবং কিভাবে কাজ করে

আপেক্ষিক তুলনামূলক শক্তিমত্তা প্রবলতার সূচক

আর.এস.আই টেকনিক্যাল এনালাইসিস এর অনেক জনপ্রিয় একটি ইন্ডিকেটর, এটি শেয়ার/কারেন্সি পেয়ার এর রিসেন্ট প্রাইস এর পরিবর্তন এর মূল্যায়ন করে উক্ত শেয়ার/কারেন্সি পেয়ার এর ওভারবট বা ওভারসোল্ড অবস্থার গ্রাফিক্যাল তথ্যচিত্র প্রদান করে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বায়ার বা সেলার মধ্যে কাদের প্রাধ্যান্য রয়েছে তা এক নজরে বুঝতে আরএসআই বেশ কার্যকর, এটি মোমেন্টাম (ভরবেগ- কোন প্রাইস এর পরিবর্তন এ কতটা ভলিউম এবং কত গতির তা নির্ধারন করে) ইন্ডিকেটর। আমরা ক্যন্ডেল এর আকার, ওপেন, থেকে ক্লোজিং এর দূরত্ব দেখেও বুঝতে পারি কিন্তু এই তথ্যগুলো সহজে বুঝতেই মোমেন্টাম ইন্ডিকেটর গুলো ভূমিকা রাখে। 

১৯৭৮ সালে মি.জে ওয়েলস ওয়াইল্ডার জুনিয়র তার সেমিনাল বই ” নিউ কনসেপ্ট ইন টেকনিক্যাল ট্রেডিং সিষ্টেম’স এ আর.এস.আই পরিচয় করান প্রথমবার এর মত। আরএসআই দোলক  ০ থেকে ১০০ এর মধ্যে দুলতে থাকে। এই ০ থেকে ১০০ মাঝে ৩০ থেকে ৭০ এর দুটি রেখা রয়েছে এবং এই রেখার মাঝখানে প্রাইজ এর প্রদর্শন লাইন আকারে থাকে। ঐত্যিগতভাবে প্রাইজ যখন ৩০ রেখা স্পর্শ করে উক্ত সময়ে প্রাইজ ওভারসোল্ড অর্থাৎ এরপর আরও সেল হতে হলে সাধারন সময়ের চেয়ে অধিক ভলিউম এর গতির প্রয়োজন হবে বা মার্কেট সম্ভাব্য ট্রেন্ড পরিবর্তন করবে বলে ধারণা করা হয়। একইভাবে যখন প্রাইজ ৭০ তে স্পর্শ করে তখন উক্ত শেয়ার বা কারেন্সি পেয়ার এর প্রাইজ কে ওভারবট অবস্থা বলা হয় এরপর আরও বাই হতে হলে সাধারন সময়ের চেয়ে অধিক ভলিউম এবং গতির প্রয়োজন হবে বা মার্কেট সম্ভাব্য ট্রেন্ড পরিবর্তন করবে বলে ধারণা করা হয়। 

আর.এস.আই আমাদের চার্টের প্রাইস মুবমেন্ট এর বায়ার এবং সেলারদের মধ্যে শক্তিমত্তার তথ্য প্রদান করে। যা এর নাম এর সাথেই জড়িত।

আরএসআই এর মূল ভিত্তি

আর.এস.আই টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস  এর মূল ” History tends to repeat itself ” এই ভিত্তিরই বহিঃপ্রকাশ এর ভিন্নরূপ।কোন শেয়ার/কারেন্সি পেয়ার এর প্রাইজ যখন বেড়ে এমন একটি লেভেল এ যায় যখন কোন পূর্বের রেসিস্ট্যান্স এ পৌছায় যেখান থেকে প্রাইজ আগেও পুলব্যাক করে অর্থাৎ প্রাইজ কমেছে কারন এই জোন এ বায়ার/বুলসগন আর বেশী প্রাইজএ  কিনতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন তখন তারা তাদের থাকা শেয়ার/কারেন্সি পেয়ার আরও না কিনে বিক্রি করে দেন তখন মার্কেট এ সেলার/বেয়ারসরা প্রবেশ করে । যারা এগ্রেসিভ বেয়ার তারা প্রথমে প্রবেশ করে ওই অবস্থান থেকে সেল এর পক্ষে ট্রেড নেয় যাতে করে পরবর্তীতে আরও সেলারদের জন্য আকর্ষণীয় ট্রেড এর সম্ভাবনা তৈরি হয় এবং প্রাইজ আবারও কমে এবং বেয়ার’স মার্কেটে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। একইভাবে যখন প্রাইজ সাপোর্ট জোন এ প্রবেশ করে তখন বেয়ার’স গন আরও বেশী সেল করার পক্ষে যুক্তি খুজে পান না তখন সে অবস্থান থেকে প্রফিট নিয়ে নেন যার ফলে প্রাইজ আবারও পূলব্যাক করে তখন মার্কেট এ বুলস/বায়ার’সগন প্রবেশ করেন।  যারা এগ্রেসিভ বায়ার তারা প্রথমে প্রবেশ করে ওই অবস্থান থেকে বাই এর পক্ষে ট্রেড নেয় যাতে করে পরবর্তীতে আরও বায়ারদের জন্য আকর্ষণীয় ট্রেড এর সম্ভাবনা তৈরি হয় এবং প্রাইজ আবারও বাড়তে থাকে এবং বায়ার’সগন মার্কেটে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।

আর.এস.আই এর আদর্শ টাইম পিরিয়ড হল ১৪, এই সময়ের মধ্যে যখন কোন কারেন্সি পেয়ার এর প্রাইজ এর আর.এস.আই মান ৭০ বা তার কাছাকাছি অবস্থান করে এই অবস্থায়ই সাধারণত বায়ারগন অপেক্ষা করেন, সীদ্ধান্তহীনতায় ভূগেন বা প্রফিট নিয়ে নেন। তাই এটিকে ওভারবট অবস্থা হিসেবে চিহ্নিত করা যায় এই সময় অনেক ট্রেডারগন সম্ভব্য সেল জোন হিসেবে বিবেচনা করেন এবং সেল করতে থাকেন বা সেল এর পক্ষে অবস্থান নেন। 

একইভাবে যখন আর.এস.আই মান ৩০ এর কাছাকাছি থাকে তখন ওই শেয়ার/কারেন্সি পেয়ার এর সেলার/বেয়ার’সগন আরও অধিক পরিমান প্রফিট নেয়ার বদলে এই জোন এ তাদের ট্রেড এর অবস্থান ক্লোজ করে প্রফিট নিয়ে নেন। আর এই সময়ে ওভারসোল্ড লেবেল বলে চিহ্নিত করা হয়।

আর.এস.আই থেকে সম্ভাব্য ট্রেডিং এর সিদ্ধান্ত 

আর.এস.আই ট্রেডারদের প্রয়োজনীয় বেশ কিছু তথ্য প্রদান করে, এখন আমরা এই বিষয়গুলোর উপর আলোকপাত করবো। 

আর.এস.আই থেকে আমরা মার্কেট ট্রেন্ড সম্বন্ধে ধারণা লাভ করতে পারি। আমরা কিভাবে সেটি করতে পারি?

৭০ এবং ৩০ এর মাঝামাঝি একটি হরাইজোন্টাল লাইন আঁকলে অর্থাৎ ৫০ এর কাছাকাছি অবস্থানে অনেক ট্রেডারগন এর ব্যবহার করেন।কোন শেয়ার এর মার্কেট ট্রেন্ড পরিবর্তন এর কনফারমেশন হিসেবে। যখন কোন কারেন্সি পেয়ার ৩০ আর.এস.আই হতে প্রাইজ রিট্রেস করে ৫০ এর লাইনকে অতিক্রম করবে তখন ট্রেন্ডএ পরিবর্তন এর শক্তিশালী ধারণা পাওয়া যায়। আবার যখন ৭০ থেকে ৫০ লাইনকে অতিক্রম করে তখন সম্ভাবনাময় রিভার্স এর ধারণা করা হয়।

আর.এস.আই থেকে আমরা মার্কেট ট্রেন্ড সম্বন্ধে ধারণা লাভ করতে পারি
ট্রেন্ড পরিবর্তন

সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্স হিসেবে আর.এস.আই 

আর.এস.আই মার্কেট এর সঠিক সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্স সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা প্রদান করে। এই সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্স লাইন হরাইজোন্টাল জোন আকারে আসতে পারে বা স্লোপিং। ঢালু ট্রেন্ডলাইন এর মতও হতে পারে।

সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্স
সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্স

চার্টে যেমন করে আমরা ট্রেন্ডলাইন সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্স এর লাইন আঁকতে পারি তেমনিভাবে আর.এস.আইতে ও  সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্স লাইন আঁকতে পারি  এটি অনেকটা ক্যান্ডেলষ্টিক চার্ট এ এবং লাইন চার্টে সাপোর্ট এবং রেসিস্ট্যান্স লাইন আঁকারই মতো। 

আরেকটি উদাহরণ যেখানে প্রাইজ  রেসিস্ট্যান্স লাইন এ একাধিকবার টেস্ট করে প্রাইজ এ ব্যাপক সেল হয়েছে। উদাহরণ USD/CAD

আর.এস.আই ডাইভারজেন্স(অপসরণ)/ বিচ্যুতি 

আর.এস.আই ডাইভারজেন্স এর ইঙ্গিত দেয় তখনই যখন প্রাইজ একশন বা প্রাইজ চার্ট এর তথ্য এবং আর.এস.আই এর যে তথ্য দেখায় তাদের মোমেন্টাম একই থাকে না/ ভিন্ন থাকে। আর.এস.আই নির্দিষ্ট টাইমফ্রেম এ প্রাইজ মুভ এর মাত্রা, বিশালতা, কতটা গুরুত্ব তা প্রকাশ করে। 

যখন চার্ট এর আর.এস.আই তে লোয়ার হাই তৈরি করে কিন্তু প্রাইস চার্ট হায়ার হাই প্রদর্শন করে অথবা আর.এস.আই হায়ার লো তৈরি করে কিন্তু প্রাইস এ নতুন লোয়ার লো তৈরি হয়। যখন আর.এস.আই কোন আপ্ট্রেন্ড প্রাইস মুবমেন্ট এ নতুন হায়ার হাইস ব্রেক করে যায় না বা ব্রেক করা থামিয়ে দেয় বা ডাউনট্রেন্ড মার্কেট এ নতুন লোয়ার লো ব্রেক করা বন্ধ করে দেয় এটিকেই আর.এস.আই  ডাইভারজেন্স বলে। ডাইভারজেন্স মূলত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত প্রদান করে, যা হলো ওই নির্দিষ্ট টাইম্ফ্রেম এ বর্তমান মার্কেট ট্রেন্ড মোমেন্টাম হারিয়ে ফেলছে, ট্রেন্ড এর পিছনে যে ভলিউম এবং গতি প্রয়োজন তা কমছে। যা বর্তমান মার্কেট ট্রেন্ড এর বিপরীতে ট্রেড দেয়ার সম্ভাব্য মক্ষওম সময় বলে অনেক ট্রেডার মনে করেন, যে এই সময়েই মার্কেট তার ট্রেন্ড পরিবর্তন করার সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং  আর.এস.আই ডাইভারজেন্স হল যখন ইনডিকেটর মার্কেট প্রাইজ মুবমেন্টকে সমর্থন না করে ভিন্ন সম্ভাবনা প্রদর্শন করে। 

যখন আর.এস.আই ইনডিকেটর এ ওভারসোল্ড মান থাকে এবং তারপর হায়ার লো এর প্রদর্শন করে, যেখানে প্রাইজ একশন লোয়ার লো প্রদর্শন করে। এটিই হলো আর.এস.আই বুল্লিশ ডাইভারজেন্স। যা ক্রমে বুল্লিশ মোমেন্টাম এর শক্তিশালী হওয়ার ইঙ্গিত প্রদান করে, আর.এস.আই ওভারসোল্ড মান এর ব্রেকআউট হলে এটি সাধারনত সম্ভব্য বাই এর ইঙ্গিত প্রদান করে, যেখান বুল্লিশ ডাইভারজেন্স তাতে নতুন মাত্রা যোগ করে। 

যখন আর.এস.আই ইনডিকেটর এ ওভারবট মান থাকে এবং তারপর লোয়ার হাই এর আকৃতি নেয়, যেখানে প্রাইস একশন হায়ার হাই প্রদর্শন করে। যা মোমেন্টাম এর সম্ভাব্য দুর্বলতার ইঙ্গিত প্রদান করা যা সম্ভাব্য ট্রেন্ড পরিবর্তন এর সম্ভাবনা দেখায়। ওভারবট রিডিং সাধারণ প্রফিট টেকিং জোন বা শর্ট সেল এর সম্ভাব্য সুযোগও অনেক ট্রেডারডের জন্য। ডাইভারজেন্স লম্বা সময়ের জন্য সেল দেয়ার ইঙ্গিত প্রদান করে। 

আর.এস.আই এর পিরিয়ড

আর.এস.আই এর আদর্শ সেটিংস হল ১৪ পিরিয়ড যার মানে হলো আর.এস.আই গত ১৪ ক্যান্ডেল এর বা সময়ের ( ১৪ ঘণ্টা, ১৪ দিন, ১৪ সপ্তাহ) মূল্যায়ন করে। 

আর.এস.আই এভারেজ গেইন এবং এভারেজ লস এর মধ্যে তুলনা করে এবং গত ১৪ ক্যান্ডেল এর মধ্যে কতগুলো বুল্লিশ ছিল এবং বেয়ারিশ ছিল তা অ্যানালাইসিস( বিশ্লেষণ) করে, এছাড়াও আর.এস.আই প্রতিটি ক্যান্ডেল এর সাইজও বিশ্লেষণ করে।” 

উদাহরন সরূপ হতে পারে যদি পিছনের ১৪ ক্যান্ডেল ই বেয়ারিশ থাকে তাহলে আর.এস.আই যে মান প্রদর্শন করবে তা হল ০ বা তার কাছাকাছি কোন নাম্বার,একইভাবে যদি গত  ১৪ ক্যান্ডেল ই বুল্লিশ হয় তবে আর.এস.আই যে মান প্রদর্শন করবে তা হল ১০০ বা তার কাছাকাছি নাম্বার প্রদর্শন করবে। যদিও আর.এস.আই দোলক ৭০ এবং ৩০ এই দুটি রেখার উপর নির্ভর করে। যা নিয়ে আমাদের আর্টিকেল এ আলোচনা করবো। আর.এস.আই মান ৫০ হবে যদি পিছনের ১৪ ক্যান্ডেল এর মধ্যে ৭ টি বুল্লিশ  এবং বেয়ারিশ ক্যান্ডেল থেকে এবং তাদের গড় মানও যদি বা আকারও যদি একই হয়। 

কিছু উদাহরণ দিতে হবেঃ- যেখানে বুল্লিশ  এবং বেয়ারিশ দুটোই দেখাতে হবে।

উদাহরণ দুইতে একই চার্টে ২ বা ৩ প্রকার অবস্থান দেখানো যায়। 

আপনি একটু লক্ষ্য করলেই দেখবেন যে ১৪ টি ক্যান্ডেল নিয়ে বিশ্লেষণ করলে আপনিও কাছাকাছি মান সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবেন। কিন্তু ইন্ডিকেটর এর সুবিধা হল এটি আমাদের অনুমান করার কাজকে সহজতর করে,এবং তথ্যগুলো দ্রুত প্রক্রিয়াকরনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। 

ওভারবট(Overbought) এবং ওভারসোল্ড(Oversold) যা প্রচলিত এবং যা বাস্তব

সাধারণত যে ধারণা থেকে ট্রেডারগন আর.এস.আই এর ব্যবহার করেন তা হল যখন আর.এস.আই চরমভাবে/অত্যন্ত নিম্নে অবস্থান করবে( ৭০ থেকে উঁচুতে বা ৩০ এর চেয়েও কম) এই সময়ের প্রাইজকে বলা হয় ওভারবট বা ওভারসোল্ড। এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে যেখানে প্রাইজ এই উচ্চতায় উঠার পর তা আবার না কমে বরঞ্চ আরও বেড়েছে। ওভারসোল্ড এর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। তাই এই ইঙ্গিত এর উপর সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস নিয়ে ট্রেডিং ডিসিশন নেয়া দক্ষ ট্রেডার এর বৈশিষ্ট্য হতে পারে না, বা যৌক্তিক নয়। যে প্রাইজ  ওভারবট অবস্থায় রয়েছে এর মানে এই নয় যে প্রাইজ পরিবর্তিত হতেই পারে। আর.এস.আই ওভারসোল্ড এবং ওভারবট যে কোন সিগন্যাল প্রদান করেনা তা আমরা কিছু উদাহরণ থেকে স্পষ্ট হবো। 

ওভারবট এবং ওভারসোল্ড
ওভারবট এবং ওভারসোল্ড

যদি প্রাইজ মুভমেন্ট এর পিছনে কতটা শক্তি জড়িত তা যাচাই করার প্রয়োজন হয় তবে আর.এস.আই one of the best টুলস। কারন আর.এস.আই রিসেন্ট মার্কেট এ বুলস না বেয়ার কাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে  এবং কতটা গতি রয়েছে তা বিবেচনা করে।